সামাজিক পরিবেশ কাকে বলে? সামাজিক পরিবেশের বৈশিষ্ট্য

একটি শিশুর জীবন বিকাশে সামাজিক পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম। সামাজিক পরিবেশ কাকে বলে এবং সামাজিক পরিবেশের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

প্রাকৃতিক পরিবেশের মতো আমাদের প্রত্যেকের জীবনে সামাজিক পরিবেশের গুরুত্ব রয়েছে। মানুষ সামাজিক জীব তা আমরা অনেক আগে থেকেই জানি। তাই, মানুষের জন্য সামাজিক পরিবেশের গুরুত্ব অনেক। একটি শিশু জন্মগ্রহণ করার পর থেকে সামাজিক পরিবেশের প্রতিটি উপাদান তার মানসিক বিকাশে সহযোগিতা করে থাকে।

একটি শিশুর সামাজিক পরিবেশ যেমন হয়, উক্ত শিশুটির মানসিক বিকাশ ঠিক সেভাবেই হবে। তাই, শিশুর জীবনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে তার সামাজিক পরিবেশ ঠিক রাখা। তো চলুন, সামাজিক পরিবেশ কাকে বলে এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

সামাজিক পরিবেশ কাকে বলে?

একজন মানুষের চারপাশে থাকা সকল উপাদান, যা তার জীবনযাত্রাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে থাকে, তাকে সামাজিক পরিবেশ বলে। সামাজিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। যেমন – পরিবার, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, ক্লাব, সমিতি ইত্যাদি।

সামাজিক পরিবেশ থেকে একটি শিশু ছোট থেকেই বিভিন্ন মানবিক মূল্যবোধ শিখে থাকে। যেমন – বিভিন্ন নিয়ম-কানুন, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ ইত্যাদি। তাই, একটি শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য সামাজিক পরিবেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন – প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে

একটি শিশু তার জীবনে কী পরিমাণ মানবিক মূল্যবোধ শিখবে, কেমন আচার-আচরণ শিখবে এবং নিয়ম-কানুন শিখবে তা নির্ভর করে উক্ত শিশুটি কেমন সামাজিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠছে। তাই, শিশুর সামাজিক পরিবেশের উপাদানগুলো ঠিক হতে হবে।

সামাজিক পরিবেশের বৈশিষ্ট্য

সামাজিক পরিবেশে বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। সামাজিক পরিবেশের উপাদানগুলো হচ্ছে পরিবার, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, বিভিন্ন ক্লাব এবং সমিতি সহ আরও অনেক কিছু। এসব উপাদান একটি শিশুর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

সামাজিক পরিবেশের এই উপাদানগুলো থেকে ছোটবেলা থেকে একটি শিশু যা শিখবে, পরবর্তী জীবনে সে তাই করবে। এজন্য, সামাজিক পরিবেশের উপাদানগুলোর বৈশিষ্ট্য হতে হবে নমনীয় এবং শিক্ষণীয়। যা দেখে বাচ্চারা নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ শিখতে পারবে।

শিশুর জীবন বিকাশে সামাজিক পরিবেশের ভূমিকা

একটি শিশুর জীবন বিকাশে সামাজিক পরিবেশের ভূমিকা অপরিসীম। তাই, শিশুর মানসিক বিকাশ করতে চাইলে এবং সুশিক্ষায় বড় করে তুলতে চাইলে উক্ত শিশুটির সামাজিক পরিবেশের উপাদানগুলোকে ঠিক করতে হবে। নিচে সামাজিক পরিবেশের গুরুত্ব উল্লেখ করে দিয়েছি।

আরও পড়ুন – নবীন বরণ অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেয়ার নিয়ম

দৈহিক বিকাশ

একটি শিশুর দৈহিক বিকাশের জন্য সামাজিক পরিবেশের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার যত ভালো হবে, একটি শিশুর দৈহিক বিকাশ তত ভালো হবে। এছাড়াও, শিশুর মানসিক বিকাশের জন্যও পরিবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবারের সদস্যদের সবাইকে বাচ্চাদের সাথে নমনীয় হতে হবে এবং তাদেরকে সর্বদা শিক্ষণীয় বিষয় সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। এছাড়াও, বাচ্চার দৈহিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য যত্ন করতে হবে।

মানসিক বিকাশ

উপরের ধাপে আমি ইতোমধ্যে উল্লেখ করে দিয়েছি যে একটি বাচ্চার দৈহিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য পরিবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি, বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশের জন্য পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও ক্লাব অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

বাচ্চারা দেখে দেখে শিখে। ফলে, তারা যা দেখবে তা দেখেই শিখবে এবং পরবর্তী জীবনে এই শিক্ষা তাদেরকে উন্নতির দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। একইভাবে মানসিক বিকাশ সঠিকভাবে না হলে তা বাচ্চাদেরকে ভিন্ন পথে চালিত করতে পারে।

আরও পড়ুন – ১ বিলিয়ন সমান কত টাকা জেনে নিন

ভাষার বিকাশ

একটি শিশু জন্মের পর থেকে মা এবং পরিবার এর পাশাপাশি সমাজের থেকে তার মাতৃভাষা শিখে থাকে। ভাষার বিকাশ হওয়ার জন্য শিশুর পরিবার এবং সমাজকে ভালো হতে হবে। তবে, ভাষার বিকাশের জন্য শিশুর মা ও পরিবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

নৈতিক বিকাশ

একটি শিশু নৈতিকতা শিখে থাকে সমাজের বিভিন্ন পর্যায় থেকে। সামাজিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শিশুর নৈতিক বিকাশ হয়ে থাকে। কোন কাজটি ভালো এবং কোন কাজটি মন্দ তা একটি শিশু বুঝতে শুরু করে সমাজের এসব উপাদান থেকেই।

বিশেষ করে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেই একটি শিশুর নৈতিক বিকাশ হয়ে থাকে। এছাড়াও, শিশুর নৈতিক বিকাশ হওয়ার জন্য পরিবার এবং শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অনেক।

সামাজিক বিকাশ

মানুষ সামাজিক জীব। এজন্য সমাজের প্রতিটি স্তরে মানুষকে মানিয়ে চলতে হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকে। তাই, এই সমস্যাগুলোর সমাধান করার মাধ্যমেই বেঁচে থাকতে হয়। একটি শিশু ছোট বেলা থেকেই সমাজের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন দেখে শিখে থাকে এবং পরবর্তীতে তা অনুসরণ করেই বাকী জীবন পরিচালনা করে।

আরও পড়ুন – অব্যাহতি পত্র লেখার নিয়ম

এছাড়াও, সমাজ থেকে শিশুরা নেতৃত্ব, সহযোগিতা, সহমর্মিতা সহ আরও অনেক গুণ শিখে থাকে। যেগুলো তাদেরকে পরবর্তীতে জীবনে অনেক সাহায্য করে থাকে। এভাবে করেই এসব গুণ ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি প্রজন্মের কাছে ধাবিত হচ্ছে।

এসব গুণ ছাড়াও আরও অনেক গুণ শিশুরা শিখে থাকে সমাজের কাছে থেকে। তাই, প্রতিটি শিশুর কাছেই সামাজিক পরিবেশের গুরুত্ব অনেক। ইতোমধ্যে আমি সামাজিক পরিবেশ কাকে বলে এবং সামাজিক পরিবেশের বৈশিষ্ট্য সহ বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছি।

সামাজিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি

সামাজিক পরিবেশের উপাদানগুলো হচ্ছে – মানুষ, পরিবার, প্রতিষ্ঠান, সংস্কৃতি, গণমাধ্যম, প্রযুক্তি, পরিবেশ, অর্থনীতি, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি। এগুলো ছাড়াও সামাজিক পরিবেশের আরও অনেক উপাদান রয়েছে। এসব উপাদান থেকে একটি শিশু শিক্ষা, ধর্ম, শিল্প, সাহিত্য, খেলাধুলা, বিনোদন, জীবনধারা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, রীতিনীতি, আইনকানুন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে এবং শিখতে পারে।

সামাজিক পরিবেশের তিনটি উপাদানের নাম লেখ

সামাজিক পরিবেশের তিনটি উপাদানের নাম হচ্ছে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। একটি শিশুর দৈহিক বিকাশ, মানসিক বিকাশ, নৈতিক বিকাশ, ভাষার বিকাশ সহ বিভিন্ন ধরনের বিকাশ হয়ে থাকে সামাজিক পরিবেশের এই গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উপাদানের মাধ্যমেই।

সামাজিক পরিবেশের দশটি উপাদানের নাম লেখ

সামাজিক পরিবেশের দশটি উপাদানের নামগুলো হচ্ছে –

  • মানুষ
  • পরিবার
  • প্রতিষ্ঠান
  • সংস্কৃতি
  • গণমাধ্যম
  • প্রযুক্তি
  • পরিবেশ
  • অর্থনীতি
  • রাজনীতি
  • আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

উপরে উল্লেখ করে দেয়া সামাজিক পরিবেশের ১০টি উপাদান প্রতিটি মানুষের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে সামাজিক পরিবেশের এই উপাদানগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এতক্ষণ যাবত সামাজিক পরিবেশ কাকে বলে, সামাজিক পরিবেশের উপাদানের নাম সহ বিভিন্ন সামাজিক পরিবেশের উপাদানের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি।

আমাদের শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে সামাজিক পরিবেশ কাকে বলে এবং সামাজিক পরিবেশের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছি। এছাড়া, সামাজিক পরিবেশের উপাদানগুলো কি কি তা নিয়েও আলোচনা করেছি। আরও এমন তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন।

আমি Specific Info ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা এবং অ্যাডমিন। প্রফেশনালি কন্টেন্ট রাইটিং করার পাশাপাশি এই ব্লগে পড়ালেখা, সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক তথ্য নিয়ে লিখে থাকি।

Leave a Comment