প্রতিবার নতুন বছরে শিক্ষক এবং সিনিয়র শিক্ষার্থীরা নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। তখন, নবীন বরণ অনুষ্ঠানের বক্তব্য দিতে হয়। এই পোস্টে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষকের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করবো।
আপনি যদি নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে চান কিন্তু জানেন না যে কীভাবে বক্তব্য দিতে হয় এবং কোথায় থেকে শুরু করে কী কী বলতে হবে, তাহলে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
তো চলুন, নবীন বরণ অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
Table of Contents
নবীন বরণ অনুষ্ঠানের বক্তব্য
নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে স্কুল/কলেজে স্বাগত জানাতে হবে, নিজের পরিচয় দিতে হবে এবং তাদেরকে পড়ালেখা বিষয়ক পরামর্শ দিতে হবে। এতে করে, শিক্ষার্থীরা একটি ভিশন নিয়ে তাদের ছাত্রজীবন সম্পন্ন করতে হবে। নিম্নে উল্লেখ করে দেয়া বক্তব্যটি চর্চা করে এটি ব্যবহার করে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে পারেন।
প্রিয় নবীন শিক্ষার্থীবৃন্দ, আজকের এই আনন্দঘন দিনে তোমাদের সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমিও একদিন তোমাদের মতোই নবীন ছিলাম।
এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর আজ থেকে তোমাদের নতুন একটি জীবনের সূচনা হচ্ছে। এখন থেকে তোমাদের জন্য অনেক সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হবে। এখানে তোমাদের জ্ঞান অর্জনের সুযোগ হবে, নতুন বন্ধু গড়ে তোলার সুযোগ হবে, এবং তোমরা নিজেদেরকে যোগ্য নাগরিক এবং দেশের কৃতি সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ পাবে।
এই প্রতিষ্ঠান থেকে যে জ্ঞান, দক্ষতা এবং মানবিক মূল্যবোধ শিক্ষা পাবে, সেগুলো তোমাদেরকে ভবিষ্যতে সফল হতে সাহায্য করবে। তাই আজ থেকে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে, শিক্ষকদের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে, এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।
এছাড়াও, নিয়মিত পড়ালেখার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে হবে। এতে করে তোমরা নিজেদের মাঝে লুকায়িত অন্যান্য মেধা বিকশিত হওয়া এবং সেগুলো বুঝার সুযোগ পাবে। তোমাদের মাঝে থেকেই ভবিষ্যতে কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, ক্রিকেটার, ফুটবলার, কৃষিবিদ ইত্যাদি হবে।
আশা করি, তোমরা সবাই এই প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠুভাবে পড়াশোনা করবে এবং একজন সুশিক্ষিত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। যেকোনো প্রয়োজনে-সমস্যায় অবশ্যই শিক্ষকদের সহযোগিতা নিবে। ধন্যবাদ।
নবীন বরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষকের বক্তব্য
নবীন বরণ অনুষ্ঠানে একজন শিক্ষক যখন বক্তব্য দিবেন, তখন প্রথমেই শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিষ্ঠানে স্বাগত জানাতে হবে। অতঃপর, শিক্ষকের নিজের পরিচয় তুলে ধরতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা তার সম্পর্কে জানতে পারে। অতঃপর, শিক্ষার্থীদেরকে পড়ালেখা বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ দিতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন, কীভাবে পড়ালেখায় ভালো করা যাবে, কীভাবে নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে এসব বিষয়ে পরামর্শ দিতে হবে। নবীন বরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষকের বক্তব্যটি নিচে উল্লেখ করে দেয়া রয়েছে। এটি অনুসরণ করতে পারেন।
” আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো তোমরা? আমাদের প্রতিষ্ঠানে আজ থেকে তোমাদের নতুন পথচলা শুরু।
তোমরা সবাই এখানে নতুন। কেউবা হয়তো আগেও এই প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছো। আমাকে হয়তো অনেকেই চিনো, আবার অনেকেই চিনো না। আমার পরিচয়টা দিয়ে নেই। আমি মোঃ ফারহান ইসলাম, তোমাদের সাধারণ গণিত বিষয়ের শিক্ষক।
নতুন প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা শুরু করার পর থেকে বন্ধু-সহপাঠী এবং শিক্ষকদের থেকে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবে এবং শিখতে পারবে। সর্বদা চেষ্টা করবে নৈতিক কাজগুলো করার এবং অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকার।
নিয়মিত স্কুলে/কলেজে আসতে হবে এবং পড়ালেখা নিয়মিত করতে হবে। দশের লাঠি, একের বোঝা। তাই, প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন সম্পন্ন করতে হবে। নয়তো, পরীক্ষার আগে গিয়ে একসাথে অনেক বিষয় সম্পন্ন করার আগেই পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে।
তাই, নিয়মিত পড়ালেখা করতে হবে। একজন আদর্শ শিক্ষার্থী প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন সম্পন্ন করে। তোমরা সবাই আদর্শ শিক্ষার্থী হতে চাও কি না?
প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে, সহপাঠীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং শিক্ষকদেরকে সম্মান করতে হবে।
নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তবেই, তোমরা দেশের সুনাগরিক এবং সচেতন নাগরিক হতে পারবে ও ভবিষ্যতে দেশের কর্ণধার হতে পারবে।
অ্যাকাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি স্কুলে অনুষ্ঠিত হওয়া সকল অনুষ্ঠান এবং খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এতে করে তোমাদের সূক্ষ্ম মেধাগুলো বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে।
সবার নিশ্চয়ই একটি লক্ষ্য আছে? বড় হয়ে কী হতে চাও তোমরা? নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাইলে এখন থেকে ঠিকভাবে পড়ালেখা করতে হবে। তবেই তোমরা সফল হতে পারবে। এছাড়াও, পড়ালেখা করার পাশাপাশি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে ভুলবে না যেন। এতে করে তোমাদের মাঝে সময়ানুবর্তিতা এবং নিয়মানুবর্তিতা বজায় থাকবে।
পড়ালেখা এবং প্রতিষ্ঠান বিষয়ক যেকোনো সমস্যায় শিক্ষকদের অবহিত করবে। আমার ছোট্ট বক্তব্যটি এখানেই শেষ করছি। “
উপরে উল্লেখ করে দেয়া নবীন বরণ অনুষ্ঠানের বক্তব্যটি চর্চা করে এটি ব্যবহার করে আপনার স্কুল বা কলেজে অনুষ্ঠিত হওয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে পারেন। তবে, বক্তব্য দেয়ার সময় আপনার নাম এবং পরিচয় দিতে ভুলবেন না যেন। এতে করে নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে আপনার পরিচয় পর্ব সম্পন্ন হয়ে যাবে।
নবীন বরণ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা
নবীন বরণ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করার জন্য উপরে উল্লেখ করে দেয়া নবীন বরণ অনুষ্ঠানের বক্তব্যগুলো অনুসরণ করতে পারেন। উপরে দুইটি নবীন বরণ অনুষ্ঠানের বক্তব্য উল্লেখ করে দেয়া রয়েছে। এখানে থেকে নবীন ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষকের নমুনা বক্তব্য অনুসরণ করতে পারেন।
বক্তব্য দেয়ার মাঝে নবীন বরণ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করতে পারবেন। এছাড়াও, আপনি চাইলে অনুষ্ঠানে নবীন বরণ উক্তি দিতে পারেন। শিক্ষার্থীদেরকে পড়ালেখা এবং জীবনমুখী বিভিন্ন শিক্ষণীয় নবীন বরণ উক্তি দিলে তাদের মাঝে পড়ালেখার প্রতি আকর্ষণ জন্মাবে।
আরও পড়ুন – বাংলায় আবেদন পত্র লেখার নিয়ম
নবীন বরণ অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য
নবীন বরণ অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য দেয়ার জন্য সালাম বা যেকোনো অভিবাদন দ্বারা শুরু করতে হবে। এরপর, সবার সাথে নিজের পরিচয় পর্ব সম্পন্ন করতে হবে। অর্থাৎ, আপনার নাম এবং আপনি কে এসব বলতে হবে।
অতঃপর, শিক্ষার্থীদেরকে উদ্দেশ্য করে ছোট্ট করে শিক্ষামূলক নবীন বরণ অনুষ্ঠানের বক্তব্য দিতে হবে। বাড়তি কথা না বলে শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়ালেখা এবং নৈতিকতার বীজ বপন করার চেষ্টা করতে হবে। এতে করে তারা পড়ালেখা করার জন্য, নিজেকে নৈতিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উদ্বুদ্ধ হবে।
একজন শিক্ষকের কাজ প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া এবং তাদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। তাই, নবীন বরণ অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমেই এই কাজটি শুরু করতে হবে।
নবীন বরণ অনুষ্ঠানের কবিতা
আপনি যদি কবিতা বলতে পারেন বা নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বলার জন্য কবিতা লিখে থাকেন, তবে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় সেই কবিতাটি পাঠ করে শিক্ষার্থীদেরকে শোনাতে পারেন। এতে করে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করার জন্য মনোবল পাবে এবং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পাবে।
তবে, নবীন বরণ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদেরকে পড়ালেখা এবং নৈতিকতা বিষয়ে পরামর্শ দেয়া উত্তম। এই কাজটি একটি কবিতা পাঠ করে তাদেরকে শোনানোর মাধ্যমেও করা সম্ভব। তবে, শিক্ষার্থীরা যেন কবিতার ভাষা বুঝতে পারে, এটি মাথায় রাখতে হবে।
নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বড় ভাইদের বক্তব্য
নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বড় ভাই হিসেবে নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেয়ার জন্য সব বড় ভাইদের পক্ষে একজনকে অনুষ্ঠানের স্টেজে উঠতে হবে এবং সবার উদ্দেশ্যে পড়ালেখা বিষয়ক এবং একজন আদর্শ শিক্ষার্থী হতে কি কি করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বড় ভাইদের বক্তব্য থেকে নবীন শিক্ষার্থীরা অনুপ্রেরণা পাবে। এতে করে তাদের মাঝে পড়ালেখা করে নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি জেদ তৈরি হবে। বড় ভাই হিসেবে আপনি চাইলে নবীন বরণ অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেয়ার সময় তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন।
আরও পড়ুন – আর্থিক অনুদানের আবেদন পত্র লেখার বিস্তারিত নিয়ম
আমাদের শেষ কথা
আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে নবীন বরণ অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করেছি। এছাড়াও, নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বড় ভাইদের বক্তব্য, নবীন বরণ অনুষ্ঠানের কবিতা, নবীন বরণ অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য নিয়েও আলোচনা করেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনার স্কুল বা কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠানের বক্তব্য দিতে পারবেন অনেক সহজেই।