গনোরিয়া হচ্ছে একটি যৌন রোগ যা সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখা আবশ্যক। গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায় এবং গনোরিয়া রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আমাদের দেশে অনেকেই জানেন না যে, গনোরিয়া রোগ কি বা কী কারণে গনোরিয়া রোগ হয়। আমাদের দেশে গনোরিয়া রোগটি সাধারণত প্রমেহ নামে পরিচিত। যেহেতু এটি একটি যৌন রোগ, তাই অনেকেই এই রোগটি নিয়ে লজ্জার কারণে তেমন কথা বলতে চান না।
তবে, এটি অনেক ভয়াবহ আকার ধারণ করার পূর্বে আমাদের উচিত এই রোগটি কী, কেন হয় এবং এই রোগের লক্ষণ ও গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায় জেনে রাখা। তো চলুন, পোস্টের মূল বিষয়টিতে ফিরে আসা যাক।
Table of Contents
গনোরিয়া রোগ কী?
গনোরিয়া, যা “প্রমেহ” নামেও পরিচিত, একটি যৌন সংক্রামিত রোগ যা Neisseria gonorrhoeae নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে হয়। এটি পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর, এবং দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
গনোরিয়া রোগটি যোনিপথ, মলদ্বার, অথবা মুখ দিয়ে সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়াও, গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের সময়, সংক্রমিত মায়ের থেকে সন্তানের চোখে গনোরিয়া ছড়াতে পারে।
গনোরিয়া একটি যৌন রোগ হওয়ার কারণে পুরুষ কিংবা মহিলা, কেউই এই বিষয়টি নিয়ে ঠিকভাবে কথা বলতে চান না। ঠিক একারণে, এই রোগটি অনেক ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। তো চলুন, গনোরিয়া রোগের বিভিন্ন লক্ষণ এবং গনোরিয়া রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
গনোরিয়া রোগের উপসর্গ
গনোরিয়া রোগ হওয়ার পূর্বে বা গনোরিয়া রোগ হলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। গনোরিয়া রোগের উপসর্গগুলো পুরুষ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে পুরুষদের ক্ষেত্রে গনোরিয়া রোগের উপসর্গ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে গনোরিয়া রোগের উপসর্গগুলো উল্লেখ করে দেয়া হলো।
পুরুষের ক্ষেত্রে গনোরিয়া রোগের উপসর্গ
গনোরিয়া নামক যৌনবাহিত রোগ পুরুষের প্রোস্টেট গ্রন্থি, শুক্রনালি, এবং এপিডিডাইমিসে তীব্র প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। প্রাথমিকভাবে, আক্রান্ত ব্যক্তি লিঙ্গের মুখে পুঁজ এবং হালকা ব্যথা অনুভব করতে পারেন। কিছুদিন পর, উপসর্গগুলি কমে যায়, ফলে অনেকেই ভুলভাবে মনে করেন যে এই রোগ নিরাময় হয়ে গেছে।
কিন্তু, এই রোগ অল্প কিছু সময়ের জন্য ঠিক হলেও পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে শরীরে বাসা বাধে এবং দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা তৈরি করে শুক্রনালি বন্ধ হয়ে যাওয়া, উপ-শুক্রাশয় (এপিডিডাইমিস) নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়ে থাকে। এর ফলে একজন আক্রান্ত পুরুষের পিতা হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে।
মহিলাদের ক্ষেত্রে গনোরিয়া রোগের উপসর্গ
নারীদের ক্ষেত্রে, গনোরিয়া জীবাণু যোনিপথের গ্রন্থি, বিশেষ করে জরায়ুমুখের গ্রন্থিগুলোকে আক্রমণ করে। পরবর্তীতে, এটি ডিম্বনালিতে ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা না করা হলে, অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন — যোনিপথ থেকে পুঁজের স্রাব বের হতে পারে, প্রস্রাবের সময় তীব্র ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে ইত্যাদি আরও অনেক সমস্যা হয়ে থাকে।
গনোরিয়া কি ভালো হয়?
হ্যাঁ, সঠিক চিকিৎসা করার মাধ্যমে গনোরিয়া রোগ ভালো করা সম্ভব। আপনার মাঝে যদি উপরে উল্লেখ করে দেয়া যেকোনো একটি লক্ষণ প্রকাশ পায়, তাহলে অতি দ্রুত একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। তিনি আপনার শরীর চেকআপ করে গনোরিয়া রোগ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারবেন।
যদি আপনি গনোরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করে এবং তার বলা নিয়ম অনুযায়ী চলাচল করলে অনেক তাড়াতাড়ি এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। গনোরিয়া রোগ একটি যৌন রোগ, তাই এটিকে এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। লক্ষণ প্রকাশ পেতেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
গনোরিয়া রোগ মহিলা এবং পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে। তাই, রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে লজ্জা না করে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। নয়তো, এই রোগের কারণে পিতা/মাতা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে এবং অনেক সময় এই রোগে ভয়াবহ আকার ধারণ করে একজন মানুষের মৃত্যুর কারণ অব্দি হতে পারে। এছাড়াও, গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে গনোরিয়া রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা অবলম্বন করা যেতে পারে যা নিচে জানতে পারবেন।
গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায়
গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। গনোরিয়া রোগের লক্ষণসমূহ পুরুষ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই, আপনার ক্ষেত্রে যদি লক্ষণ প্রকাশ পায়, তাহলে আর দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করুন।
গনোরিয়া রোগের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক অনেক কার্যকরী একটি ওষুধ। তাই, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে এই গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। গনোরিয়া রোগ হওয়ার পূর্বে আমরা এই রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুললে আমাদের শরীরে গনোরিয়া রোগ আর কখনও আসতে পারবে না।
নিচে গনোরিয়া রোগ প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন।
গনোরিয়া রোগ প্রতিরোধের উপায়
গনোরিয়া রোগ হওয়ার পূর্বেই এই রোগ প্রতিরোধ করার কিছু উপায় রয়েছে। এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে চললে কখনই গনোরিয়া রোগ হবেনা। গনোরিয়া রোগ প্রতিরোধের উপায় জানা থাকলে পরবর্তীতে গনোরিয়া রোগ হবেনা এবং গনোরিয়া রোগ প্রতিকারের উপায় খুঁজতে হবেনা।
গনোরিয়া রোগ যেহেতু একটি যৌন রোগ, তাই অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপনের কারণেই এই রোগ সংক্রমিত হয়ে থাকে। গনোরিয়া রোগ নেই এমন সঙ্গীর সাথে যৌন সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে কনডম পড়তে হবে। একের অধিক সঙ্গীর সাথে অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক থাকার কারণে গনোরিয়া রোগ হয়ে থাকে।
এই কাজগুলো অনুসরণ করলে গনোরিয়া রোগ অনেক সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
গনোরিয়া রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
গনোরিয়া রোগের ঘরোয়া কোনো চিকিৎসা নেই। গনোরিয়া রোগের যেসব লক্ষণ বা উপসর্গ আমি উপরে উল্লেখ করে দিয়েছি, এগুলোর যেকোনো একটি যদি আপনার শরীরে প্রকাশ পায়, তাহলে অতি শীঘ্রই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
ডাক্তার আপনার শরীর সঠিকভাবে চেকআপ করার পর আপনার শরীর গনোরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা যাচাই করবেন। এরপর, ডাক্তারের দেয়া ওষুধ সেবন করার মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তবে, গনোরিয়া রোগ হওয়ার পূর্বে সতর্কতা বজায় রাখতে এবং এই রোগ প্রতিরোধ করতে অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলুন।
এভাবে করে গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এই মরণব্যাধি হওয়ার পূর্বে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলুন। রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে লজ্জা না পেয়ে অতি শীঘ্রই একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
উপসংহার
আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে গনোরিয়া রোগ কী, গনোরিয়া রোগের লক্ষণ, গনোরিয়া রোগ থেকে মুক্তির উপায় এবং গনোরিয়া রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে গনোরিয়া রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আরও এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন।