ফেমিকন পিলের ক্ষতিকর দিক গুলো কী কী?
অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের ঝুঁকি এড়াতে আজকাল জরুরি গর্ভনিরোধক পিল খাওয়ার একটা বেশ চল হয়েছে। অনেকে গর্ভধারণের ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে একই মাসে এ ধরনের জরুরি গর্ভনিরোধক পিল একাধিকবার খেয়েছেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই। সাধারণত অরক্ষিত শারীরিক সম্পর্কের ৭২ থেকে ১২০ ঘণ্টার মধ্যে এই পিল খেতে হয়।
এই পিল খেলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের হয়ে জরায়ুতে আসতে দেরি হয়। এই সময়ের মধ্যে জরায়ুতে থাকা শুক্রাণুগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ডিম্বাণু শুক্রাণুর সঙ্গে নিষিক্ত হতে পারে না। ফলে গর্ভধারণও হয় না। তবে মানবদেহ বড় বিচিত্র। অনেক সময় কিছু শুক্রাণু দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকতে পারে। তখন এই পিল খাওয়ার পরও গর্ভসঞ্চার হতে পারে। এ পর্যন্ত পাওয়া উপাত্ত অনুযায়ী দেখা গেছে, প্রতি ১০০ জনে ২ জন নারী অরক্ষিত শারীরিক সম্পর্কের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই পিল খাওয়ার পরও গর্ভধারণ করেছেন।
এই পিলগুলো সাধারণত ‘মর্নিং আফটার পিল’ নামে পরিচিত। অনেকে তাই অরক্ষিত সম্পর্কের পরদিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন পিল খাওয়ার জন্য। কিন্তু এই পিলগুলো অরক্ষিত সম্পর্কের পরপরই খাওয়া উচিত। কারণ, এগুলো খাওয়ার পর অরক্ষিত সম্পর্ক গড়লে পিলের কার্যকারিতা থাকে না।
Table of Contents
- এই পিল খাওয়ার সুবিধা
- এই পিল খাওয়ার অসুবিধা
- পিল খাওয়ার প্রভাব :
- কখন এ ধরনের পিল খাবেন
- কারা ব্যবহার করতে পারবেন না
- নিয়ম মেনে খাওয়ার পরও কখন বা কোন কোন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন
- শেষ কথা
এই ধরনের ওষুধ নারীর মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলতে পারে। জন্ম নিয়ন্ত্রক ওষুধ কাজ করে হরমোনের মাধ্যমে। তাই এগুলো সেবনের কারণে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। যার ফলাফল হতে পারে অনিয়মিত ও বিলম্বিত ঋতুস্রাব। অনেকেই আবার এই ওষুধগুলো সেবনের পর বমিভাব অনুভব করেন, এমনকি বমি হতেও পারে। এছাড়াও স্তনের স্পর্শকাতরতা বাড়তে পারে, ব্যথা হতে পারে, শরীরের ওজন বাড়তে পারে, দেখা দিতে পারে ‘মুড সুইং’।
বাংলাদেশে শতকরা ২৬ ভাগ দম্পতি জন্ম নিরোধের জন্য খাবার বড়ি ব্যবহার করেন। সাধারণত বড়ির প্রতিটি পাতায় ২১ টি সাদা বড়ি এবং ৭টি খয়েরি বা লাল রঙ এর বড়ি থাকে। এই বড়ি গুলোতে যে উপাদান থাকে তা ডিম্বানুকে পরিপক্ক হতে দেয় না, তাই গর্ভধারনও হয় না। জন্মনিয়ন্ত্রণকারী বড়ি খাবার আগে জেনে নেয়া প্রয়োজন- জন্ডিস আছে কিনা, উচ্চ রক্তচাপ আছে কিনা, ডায়াবেটিস আছে কিনা, খুব বেশি মাথা যন্ত্রণায় ভুগছেন কিনা, ঋতুস্রাব নিয়মিত হচ্ছে কিনা, তলপেটে বা স্তনে চাকা আছে কি না।
এই পিল খাওয়ার সুবিধা
১. বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই পিলগুলো অরক্ষিত সম্পর্ক শেষে খাওয়া নিরাপদ ও কার্যকর।
২. এই পিলগুলো ‘ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ’ অর্থাৎ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই যেকোনো ফার্মেসি থেকে কেনা যায়।
৩. নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় বলে অরক্ষিত সম্পর্ক স্থাপনের পর দম্পতিরা নিজেদের সিদ্ধান্তেই এই পিল খেতে পারেন।
এই পিল খাওয়ার অসুবিধা
১. পিল খাওয়ার পর অরক্ষিত শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই পিল কার্যকর নয়।
২. এই পিল চর্ম ও যৌনরোগের হাত থেকে বাঁচায় না।
৩. পিল খাওয়ার পর বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
৪. নারীর স্তনে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
৫. মাথাব্যথা হতে পারে।
৬. পরবর্তী মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।
পিল খাওয়ার প্রভাব :
১) মেদ বাড়িয়ে শরীর ভারি ও অসাড় করে দেয় ।
২) বেশি দিন ধরে খেতে থাকলে একটা পর্যায়ে শরীরে সারাক্ষণ ক্লান্ত অনুভূত হতে পারে ।
৩) প্রতিনিয়ত খাওয়ার প্রভাবে মেয়েদের জরায়ুর আকার ছোট হয়ে যেতে পারে ।
৪) মেয়েদের মাথা ঝিমঝিমানির বড় কারণ নিয়মিত এসব পিল সেবন ।
৫) নিয়মিত ৫ বছরের বেশি সময় খেতে থাকলে পরবর্তীতে মেয়েদের সন্তান ধারণে অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।
৬) এসব পিল বেশি বেশি খাওয়ায় মাঝে মাঝে ঘুম থেকে ওঠার পর মেয়েরা শরীরে চলাফেরার মতো শক্তিও হারিয়ে ফেলে।
৭) নিয়মিত ও দীর্ঘদিন জন্ম বিরতিকরন পিল খেলে সার্ভাইকাল ক্যান্সার সহ স্তন ক্যান্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৮) এই জন্ম বিরতিকরণ পদ্ধতি বন্ধ করে দেয়ার পর গর্ভধারণে দেরি হতে পারে।
৯) এইচআইভি/এইডস সহ যৌন সংক্রামক অসুখ প্রতিরোধে কোনো কার্যকরী ভূমিকা রাখে না।
কখন এ ধরনের পিল খাবেন
১. কনডম ব্যবহার করে সম্পর্ক স্থাপন করার পর কনডম ফেটে/ছিঁড়ে গেলে।
২. ডায়াফ্রাম/সার্ভাইকাল ক্যাপের স্থানচ্যুতি হলে।
৩. পরপর দুই দিন জন্মনিরোধক বড়ি খেতে ভুলে গেলে।
৪. সম্মতি ব্যতিরেকে জোর করে অরক্ষিত সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য হলে।
কারা ব্যবহার করতে পারবেন না
১. যাঁরা ইতিমধ্যে গর্ভবতী হয়েছেন।
২. যাঁরা প্রায়ই অরক্ষিত সম্পর্ক স্থাপন করেন।
নিয়ম মেনে খাওয়ার পরও কখন বা কোন কোন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন
১. যদি সন্দেহ হয় যে গর্ভসঞ্চার হয়েছে।
২. যোনি থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে ভিন্ন কোনো তরল নির্গত হলে বা গন্ধ এলে।
৩. জ্বর, বিশেষ করে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলে।
৪. তলপেটে ব্যথা হলে।
৫. যৌন সম্পর্ক স্থাপনকালে ব্যথা অনুভূত হলে।
৬. যোনি থেকে রক্তপাত হলে।
শেষ কথা
নিউটন বলেছিলেন, প্রতিটি ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু যেকোনো ওষুধের ক্ষেত্রে ‘সমান ও বিপরীত’ কথাটার মতো সামান্য নয় ব্যাপারগুলো। বরং প্রতিটি ওষুধেরই ক্ষেত্রবিশেষে বেশ বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। ‘ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ’ হলেও তাই জরুরি গর্ভনিরোধক পিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সুবিবেচক হতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
আশা করছি আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে।আমাদের যেকোনো আপডেট মিস না করতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। ধন্যবাদ সবাইকে সম্পূর্ণ দেখার জন্য।