পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
পেট ব্যথায় ভোগেন অনেকেই। খাবারে অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং আরও অনেক কারণে পেট ব্যথা হতে পারে। সেইসঙ্গে দেখা দিতে পারে বমি কিংবা বমি বমি ভাব, গা গোলানো, গলা জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা। পেট ব্যথা সারাতে অনেকে ওষুধ খেয়ে থাকেন। কিন্তু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরবর্তীতে আপনার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।
পেট ব্যথা কমানোর জন্য ঘরোয়া উপায় বেছে নিলে ওষুধের ওপরে ভরসা কমে আসবে। এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে কয়েকটি পানীয়। ঘরোয়া উপায়ে তৈরি সেসব পানীয় নিয়ম করে পান করলে পেট ব্যথার সমস্যা কমে আসবে অনেকটাই। পানীয় তৈরিতে যে ধরনের উপকরণ প্রয়োজন হবে, সেসব আমাদের রান্নাঘরেই থাকে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক পেট ব্যথা দূর করতে কোন পানীয়গুলো পান করবেন-
তাই সবাইকে এ বিষয়টি নিয়ে সচেতন হতে হবে। আসুন জেনে নেয়া যাক কীভাবে ঘরোয়া উপায়ে পেট ব্যথার সমস্যা দূর করা যায়— কিন্তু এমন কিছু টোটকা যদি পাওয়া যায়, যাতে পেটের যন্ত্রণা থেকে খানিক মুক্তি পাওয়া যাবে, তা হলে আর ক্ষতি কী?
জেনে নিন কী খাবেন এই সময়ে।তা হলে তা আপনার শরীরের কোনো ক্ষতি না করে সহজেই দূর করতে পারবেন পেটে ব্যথার সমস্যা।
আরও পড়ুন — চুলকানি দূর করার ক্রিম নাম এবং দাম কত
Table of Contents
ঘরোয়া উপায়ে পেট ব্যথার সমস্যা দূর করা যায়
আদা চা
পেট ব্যথা ও বমি বমি ভাব কমাতে আদা চা খেতে পারেন। এতে করে আমাদের শরীর থেকে সব রকমের প্রদাহ দূর হয়ে যায়। রান্না করে, কাঁচা কিংবা চায়ের মাধ্যমে আপনি আদা খেতে পারেন।
ক্যামোমিল চা
পেট ব্যথ, বমি বমি ভাব, বদহজম ও ডায়রিয়াসহ এমন অনেক রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে ক্যামোমিল। এর ভেষজের গুণ নিয়ে এখন পর্যন্ত খুব বেশি গবেষণা না হলেও এর উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেরই জানা। তাই তো পেট ব্যথায় ক্যামোমিল চায়ের ওপর ভরসা করতে পারেন।
পিপারমেন্ট চা
পেট ব্যথা কমাতে পিপারমেন্ট চা দারুণ কাজ করে। যাদের পেট ব্যথা, ইরিটেবিল বাওয়েল সিন্ড্রোম, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া ও বদহজমের সমস্যা আছে তারা চাইলে পিপারমেন্ট চা খেতে পারেন। এতে অনেকটা উপকার মিলতে পারে।
আরও পড়ুন — গনোরিয়া রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করার উপায়
লেবু চা
পেট ব্যথার সমস্যায় লেবু চা খেতে পারেন। এতে সমস্যা অনেকটা কমে যেতে পারে। তাই ঝটপট লেবু চা বানিয়ে ফেলুন। একই সঙ্গে চায়ের সঙ্গে সামান্য পরিমাণে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
লেবু ও পুদিনার রস
লেবুর রসের সঙ্গে পুদিনা পাতার রস মেশান। এরপর তার সঙ্গে সামান্য পরিমাণ আদার রস ও লবণ মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ খেলে পেট ব্যথার সমস্যা অনেকটাই কমবে।
কাঁচাকলা
কাঁচাকলার টোটকা আমাদের অনেকেরই পরিচিত। একটু পেট ব্যথা হলেই কাঁচাকলার রান্না করা খাবার খাওয়ার অভ্যাস আমাদের অনেকেরই রয়েছে। কাঁচাকলা সিদ্ধ করে খেলে পেট ব্যথা ও পেটের প্রদাহ অনেকটা কমিয়ে দেয়। এতে রয়েছে—ভিটামিন বি৬, ফোলেট এবং পটাশিয়াম। এর মিনারেল শরীরের কোনো পেশিতে টান লাগলে বা ব্যথা হলে সেটি কমাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন — এলার্জি ঔষধ এর নাম বাংলাদেশ
দই
শরীরে ডিসবায়োসিস হলে মানে পেটের ব্যাকটিরিয়ার ভারসাম্যে গন্ডগোল হলেও পেট ব্যথা হতে পারে। তাই দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক খেলে তা এই ভারসাম্য বজায় রেখে পেটে ব্যথা কম করতে পারে। এই কারণেই পেটের সমস্যা হলে দই ভাত বা দই চিরের মতো খাবার খেতে বলেন মা-ঠাকুমারা।
পর্যাপ্ত পানি পান
পেট ব্যথার সমস্যায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। কারণ, বেশি বেশি পানি পান করলে শরীর থেকে অনেকটা টক্সিন বেরিয়ে যায়।
হাঁটাহাঁটি করা
যদি আপনার নিয়মিত পেট ব্যথা শুরু হয় তাহলে আপনাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। এক্ষেত্রে পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। তাহলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
আজওয়ান
পেটের সমস্যা সমাধানে আজওয়ান খেতে পারেন। এতে ব্যথা অনেকটা কমে যাবে।
আরও পড়ুন — মেয়েদের ব্রণ দূর করার ঔষধের নাম
গরম পানির সেঁক
দ্রুত পেটের ব্যথা কমাতে গরম পানির সেঁক খুব কার্যকর। এটি পেটের ব্যথা কমাতে ও পেশি শিথিল করতে কাজ করে।
• একটি হট ব্যাগে গরম পানি ভরে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট রাখুন। প্রয়োজনে পুনরায় পদ্ধতিটি অনুসরণ করুন।
• এ ছাড়া গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। এটিও ব্যথা কমাতে কাজ করবে। তবে গরম পানি সেঁক নেওয়ার সময় একটু সতর্ক থাকুন। না হলে পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আরও পড়ুন –মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি ঔষধের নাম জেনে নিন
হলুদ
হলুদের মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন। এটি প্রদাহ কমাতে কাজ করে; পরিপাক ভালো করতে সাহায্য করে।
• এক গ্লাস বা দুই গ্লাস পানির মধ্যে হলুদ দিয়ে গরম করুন। দিনে দুইবার এটি পান করুন।
• এ ছাড়া ৪০০ থেকে ৬০০ মিলিগ্রাম কারকিউমিন সাপ্লিমেন্ট দিনে তিনবার খেতে পারেন। তবে যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
টোস্ট
টোস্ট বিস্কুট বা ওভারকুক করা রুটি পেট ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে। এতে তেমন কোনো তেল থাকে না। আর এ ছাড়া একটু পোড়া রুটি বা টোস্ট বমি ভাব কমাতেও সহায়তা করে।
আরও পড়ুন –ব্যায়াম করার ৯টি উপকারী দিক সম্পর্কে জেনে নিন
পুদিনা পাতা
পেটের ব্যথা ও বমি ভাব কমাতে এবং পেট খারাপের জন্য অনেক সহায়ক একটি প্রাকৃতিক সমাধাণ হচ্ছে পুদিনা পাতা। এটির প্রকৃতিক ব্যথানাশক বৈশিষ্ট রয়েছে। তাই পেট ব্যথা কমানোর প্রাকৃতিক সমাধাণ হিসেবে চায়ের সঙ্গে বা চিবিয়ে পুদিনা পাতা খেতে পারেন।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিড স্টার্চ থাকায় তা হজম করতে সাহায্য করে অন্ত্রের ব্যকটেরিয়াকে সুস্থ রাখে। আর এ কারণে এটি পেটের ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে।
এর জন্য এক কাপ পানিতে এক চামুচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার ও এক চামুচ মধু মিশিয়ে পান করলে উপকার পাবেন।
হিটিং প্যাড
পেটের ব্যথা কমাতে পেটে হালকা গরম করার মতো হিটিং প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। এটি যে কোনো ধররনের ক্রাম্পিং বা ব্যথা নিরাময়ে অনেক উপকারী ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি এটি বমিভাব কমাতেও সহায়তা করে।
এর জন্য আপনি গরম পানির ব্যাগ বা বোতলে হালকা গরম পানি নিয়ে পেটে ধরে রাখলেই অনেকটা স্বস্তি পাবেন। তবে এট খুব বেশি সময় ও অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করবেন না। অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
আরও পড়ুন –১০টি সাত দিনে মোটা হওয়ার উপায় জানুন ২০২৪
উপসংহার
আমরা সবাই জানি যে, ব্যথানাশক বিভিন্ন ওষুধের অনেক ক্ষতিকারক দিক আছে। তাই খুব বেশি জরুরি না হলে ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এক্ষেত্রে আপনার পেটের ব্যথা নিরাময়ে বেছে নিতে পারেন প্রকৃতিক সমাধাণ।