কাজা নামাজ কিভাবে পড়তে হয় | ফজরের কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম ও সময় এবং নিয়ত

কাজা নামাজ কিভাবে পড়তে হয় | ফজরের কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম ও সময় এবং নিয়ত

কাজা নামাজ কিভাবে পড়তে হয় | ফজরের কাজা নামাজ পড়ার নিয়ম ও সময় এবং নিয়ত

ভুলবশত কিংবা অন্য কোনো বিশেষ কারণে কোনো ওয়াক্তের নামাজ আদায় করতে না পারলে এই নামাজ পরবর্তীতে আদায় করাকে কাজা নামাজ বলা হয়। ফরজ কিংবা ওয়াজিব নামাজ ছুটে গেলে তার কাজা আদায় করা আবশ্যক।সুন্নত কিংবা নফল নামাজ আদায় করা না গেলে কাজা আদায় করতে হয় না।

কেউ যদি কাজা নামাজ আদায় না করে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং রোগে মারা যায় আর অসুস্থাবস্থায় লোকটি ওয়ারিশদের তার পক্ষ থেকে কাজা নামাজের ফিদইয়া (মূল্য) দেয়ার কথা বলে যায় এমতাবস্থায় তার ওয়ারিশদের ওপর ফিদইয়া দেয়া ওয়াজিব। এমন অনেক লোক রয়েছে, যাদের জিম্মায় অনেক কাজা নামাজ রয়েছে। তাদের উচিত এসব নামাজ দ্রুত আদায় করে নেয়া।

কাজা নামাজ আদায় করার সময় এ নিয়ত করতে হবে আমি অমুক দিনের অমুক ওয়াক্তের নামাজ কাজা আদায় করছি। আর যদি দিন-তারিখ মনে না থাকে, এমতাবস্থায় এভাবে নিয়ত করতে হবে আমি আমার জীবনের সর্বপ্রথম জোহর নামাজের কাজা আদায় করছি। এভাবে প্রত্যেক ওয়াক্ত কাজা নামাজ আদায় করার সময় নিয়ত করতে হবে। আর ততদিন পর্যন্ত কাজা নামাজ আদায় করতে থাকবে, যতক্ষণ না ওই ব্যক্তির মন এ সাক্ষ্য দেবে যে, তার জিম্মায় কোনো নামাজ কাজা নেই।

কাজা নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো প্রত্যেক নামাজের সময় একাধিক ওয়াক্তের কাজা আদায় করে নেয়া। যেমন কোনো ব্যক্তি আসরের নামাজের আজানের পর সেদিনকার ফরজ নামাজ পড়ার আগে কাজা আসরের নামাজ আদায় করল পরে সেদিনকার নামাজ পড়ল। এভাবে কাজা নামাজ আদায় করতে করতে একসময় যখন মনে হবে তার আর কোনো নামাজ কাজা নেই, তখন কাজা নামাজ পড়া বাদ দিয়ে নফল নামাজের মনোযোগী হবে।

আরো পড়ুন: সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত 
আরো পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম | তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ

যে ব্যক্তির জিম্মায় কাজা নামাজ রয়েছে, তার জন্য উত্তম হলো নফল নামাজের পরিবর্তে কাজা নামাজ আদায় করা। কেননা সে কাজা নামাজ সম্পর্কে কিয়ামতের দিন প্রশ্নের মুখে পড়বে, নফল নামাজ সম্পর্কে নয়। কাজা নামাজ আদায় করার সময় সূরা কেরাত পাঠ করার ক্ষেত্রে মূল নামাজের অনুকরণ করতে হবে। যদি সফরের সময় কারো কসর নামাজ কাজা হয়ে থাকে, তবে বাড়িতে ফেরার পরে তার কাজা কসরই আদায় করতে হবে অর্থাৎ চার রাকাতের জায়গায় দুই রাকাত আদায় করতে হবে। তেমনি ঘরে কাজা হওয়া নামাজ যদি কেউ সফরে গিয়ে আদায় করে তবে পূর্ণ নামাজ পড়তে হবে।

কাজা নামাজের সময়

পূর্ববর্তী ওয়াক্তের নামাজ ‘কাজা’ আদায়ের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট সময় নেই। নামাজের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর যখনই নামাজের কথা স্মরণ হবে তখনই পড়ে নেয়া উত্তম। যেমন ধরুন- যদি কেউ ঘুমের কারণে ফজরের নামাজ আদায় না করতে পারে; তবে সে ঘুম থেকে যখনই উঠবে, তখনই নামাজ আদায় করবে। তবে নিষিদ্ধ সময়গুলোতে মনে পড়লে অপেক্ষা করতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বা তার কম নামাজ না পড়িয়া থাকিলে তাহার তরতীবের প্রতি লক্ষ্য রাখিতে হইবে। আগের নামাজ আগে, পরের নামাজ পরে পড়িতে হইবে। যেমন, কোন ব্যক্তির ফরজ এবং যোহরের নামাজ তরক হইয়া গিযাছে; এখন আছরের নামাজ পড়িবার পূর্বে সর্ব প্রথম ফজরের কাজা তারপর যোহরের কাজা আদায় করিতে হইবে এবং তারপর আছরের নামাজ আদায় করিবে।

কাজা নামাজের নিয়ত

কাজা নামাজ এবং ওয়াক্তিয়া নামাজের নিয়ত একই রকম তবে এইটুক পার্থক্য যে কাজা নামাজে (আন উসালি্লয়া) শব্দের জায়গায় (আন আকদিয়া) এবং যে নামাজ তাহার নাম বলিয়া (আল ফাইতাতে বলিতে হইবে। ফজরের কাজা নামাজের দুই-রাক’আত ফরজ এর নিয়ত:- 

বাংলা উচ্চারণ
নাওয়াইতুয়ান আকদিয়া লিল্লাহি ত’আলা রাকাআতি ছালাতিল ফাজরি ফায়েতাতি ফারযুল্লাহি তা’আলা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থ
আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ফজরের ফরজ দুই রাকাত কাযা নামাজ আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।

যোহরের কাজা নামাজের চার-রাক’আত ফরজ এর নিয়ত:-

বাংলা উচ্চারণ
নাওয়াইতুয়ান আকদিয়া লিল্লাহি ত’আলা আরবায়া রাকাআতি ছালাতিল জোহরে ফায়েতাতি ফারযুল্লাহি তা’আলা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

আরো পড়ুন: নামাজের জন্য ১০ টি সূরার সিরিয়াল | নামাজের জন্য প্রয়োজনীয় সূরা সমূহ

বাংলা অর্থ
আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে যোহরের ফরজ চার রাকাত কাযা নামাজ আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।

আছরের কাজা নামাজের চার-রাক’আত ফরজ এর নিয়ত:-

বাংলা উচ্চারণ
নাওয়াইতুয়ান আকদিয়া লিল্লাহি ত’আলা আরবায়া রাকাআতি ছালাতিল আছরিল ফায়েতাতি ফারযুল্লাহি তা’আলা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থ
আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে আছরের ফরজ চার রাকাত কাযা নামাজ আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।

মাগরিবের কাজা নামাজের তিন-রাক’আত ফরজ এর নিয়ত:-

বাংলা উচ্চারণ
নাওয়াইতুয়ান আকদিয়া লিল্লাহি ত’আলা আরবায়া রাকাআতি ছালাতিল মাগরিব ফায়েতাতি ফারযুল্লাহি তা’আলা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থ
আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে মাগরিবের ফরজ তিন রাকাত কাযা নামাজ আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।

আরো পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম | তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ

কাজা নামাজের নিয়ম

  • কোনো মানুষ যদি দীর্ঘকাল (কয়েক মাস এবং বছর) নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকে। তার উচিত- একটা অনুমান করে নামাজের ‘কাজা’ আদায় শুরু করা। এ অবস্থায় নামাজের ‘কাজা’ আদায়ের নিয়ম হবে এ রকম- ওই ব্যক্তি যখন প্রতিদিনের নির্ধারিত ওয়াক্তের নামাজ আদায় করবে; তখন সে ওয়াক্তের সঙ্গে মিল রেখে ধারাবাহিকভাবে ঐ ওয়াক্তের ‘কাজা’ আদায় করে নেয়া। এভাবে ‘কাজা’ আদায়ে ধরাবাহিকতা রক্ষা করা। অথবা যে ওয়াক্তের ‘কাজা’ পড়তে চাইবে সে ওয়াক্তের নাম নেয়া। যেমন- ‘অমুক ওয়াক্তের সবচেয়ে প্রথম বা শেষ নামাজ পড়ছি। এভাবে নামাজের ‘কাজা’ আদায় করলে তা এক সময় পরিপূর্ণ আদায় হয়ে যাবে।
  • সফরের সময় যে নামাজ ফউত হবে; ঐ নামাজের ‘কাজা’ আদায় মুসাফির অবস্থায় যেমন হবে; মুকিম স্থায়ী হওয়ার পর সে হুকুমই থাকবে। অর্থাৎ কোনো মানুষ যদি সফরের যথা সময়ে নামাজ আদায় করতে না পারে। তবে সে সফর এবং মুকিম (বাড়িতে আসার পর) অবস্থায়ও ‘কাজা’ কসর (জোহর, আসর ও ইশার নামাজ ২ রাকাআত) আদায় করবে। আর সফরে থেকে ফিরে মুকিম সীমানায় আসার পর নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করতে না পারলে ঐ নামাজের ‘কাজা’ আদায়ের ক্ষেত্রের পূর্ণ নামাজ আদায় করতে হবে।
  • কোনো কারণে নফল নামাজ নষ্ট হলে অথবা শুরু করার পর কোনো কারণে যদি ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে তার পরে ‘কাজা’ করাও ওয়াজিব।
  • সুন্নতে মুয়াক্কাদা এবং নফল নামাজের কোনো কাজা নেই। তবে ফজরের নামাজ সুন্নত-ফরজ উভয়টা পড়তে না পারলে সুন্নত-ফরজ এক সঙ্গে কাজা করা উত্তম। দুপুরের চার রাকাআত সুন্নত পড়তে না পারলে তা ফরজ নামাজ আদায়ের পরও পড়ে নেয়া যায়।

আরো পড়ুন: সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত 

  • জোহরের ফরজ নামাজের পর যে দুই রাকাআত সুন্নাত আছে তা ফরজ নামাজ আদায়ের পর ৪ রাকাআত সুন্নাতে মুয়াক্কাদার আগেও পড়া যায় এবং পরেও পড়া যায়। তবে জোহরের ওয়াক্ত চলে গেলে জোহরের আগের এবং পরে ৪ ও ২ রাকাআত সুন্নাতের কাজা ওয়াজিব হবে না।
  • জুমআ’র নামাজের কাজা নেই; যদি কেউ জুমআ’র নামাজ কোনো কারণে আদায় করতে না পারে তবে জুমার নামাজের পরিবর্তে ঐ ওয়াক্তে সম্ভব হলে জোহরের ৪ রাকাআত নামাজ পড়ে নিবে। আর ওয়াক্ত চলে গেলেও ৪ রাকাআত জোহর আদায় করবে।
  • কাজা নামাজ জামায়াতের সহিত আদায় করিলে ইমাম কেরাত জোরে পড়িবেন। তবে যোহর এবং আছরে চুপে চুপে পড়িবেন।
  • জীবনে যে নামাজ পড়ে নাই বা কত নামাজ তরক করিয়াছে তাহার হিসাবও নাই। সে যদি এখন কাযা করিতে চায়, তবে প্রথমে নামাজের পূর্বে তরতীব অনুযায়ী কাজা আদায় করিতে থাকিব, ইহাকে ‘ওমরী কাজা’ বলে। ইহাতে অশেষ ছওয়াব আছে। কাযা নামাজের নিয়ত করিবার সময় নামাজের উল্লেখ করিয়া নিয়ত করিতে হইবে।

আল্লাহ তা্অলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের ‘কাজা’ আদায়ে এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আমি Specific Info ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা এবং অ্যাডমিন। প্রফেশনালি কন্টেন্ট রাইটিং করার পাশাপাশি এই ব্লগে পড়ালেখা, সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক তথ্য নিয়ে লিখে থাকি।

Leave a Comment