লাল শাকের কিছু উপকারিতা
Table of Contents
- কেন খাবেন লালশাক
- লাল শাকের কিছু উপকারিতা :
- লাল শাকের পুষ্টিগুণ:
- রক্তশূন্যতা কমায় লাল শাক
- আমাদের শেষ কথা
কেন খাবেন লালশাক
শীতে লাল শাক বেশি পাওয়া যায়। লাল শাকের পুষ্টিগুণ অতুলনীয়। ১০০ গ্রাম লাল শাকে রয়েছে ১০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ গ্রাম ডায়াটারি ফাইবার, ৪. ৬ গ্রাম প্রোটিন, ৪২ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৩৪০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১১ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৩৬৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ মিলিগ্রাম আয়রন, ১. ৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন-এ এবং ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি। আর এই সবকটি উপাদান শরীরের গঠনে ভীষণ ভাবে কাজে লাগে। বিশেষত ক্যানসারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখতে, ওজন কমাতে, কিডনির ক্ষমতা বাড়াতে এবং আরও নানাবিধ রোগের খপ্পর থেকে শরীরকে বাঁচাতে লাল শাকের উপদানগুলো নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।
লাল শাকে উপস্থিত বিটা-ক্যারোটিন শরীরের অ্যাজমার প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে রেসপিরেটরি সিস্টেমের উন্নতিও ঘটায়। হাড়ের নানা রোগ প্রতিকার করতে সহায়তা করে। লাল শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন-কে , যা হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার হাড় শক্তপোক্ত হয়ে উঠলে অস্টিওপরোসিস-এর মতো হাড়ের রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। লাল শাকে উপস্থিত “ফাইটোস্টেরল” নামক উপাদান থাকায় একদিকে যেমন ব্লাড প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে, তেমনি নানাবিধ হার্টের রোগের অ্যান্টিডোট হিসেবেও কাজ করে। অ্যানিমিয়ার মতো রোগের হিসেবে লাল শাক খুবই উপকারী।
এমনকি লাল শাক শরীরে লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো অ্যানিমিয়া রোগীদের এই শাকটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। ২ আঁটি লাল শাককে ব্লেন্ড করে রস সংগ্রহ করে তার সঙ্গে ১ চামচ লেবুর রস এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে যদি নিয়মিত খেতে পারেন, তাহলে শরীরে কখনো হিমোগ্লোবিনের অভাব তৈরি হবে না।
লাল শাকে উপস্থিত ভিটামিন সি রেটিনার ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। তাই যারা চোখে কম দেখেন বা পরিবারে গ্লুকোমার মতো রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা সময় নষ্ট না করে নিয়মিত লাল শাক খেতে পারেন। লাল শাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি-এর ঘাটতি দূর হয়।
ফলে রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ছোট-বড় কোনো রোগই ধারেকাছে ঘেঁষতে পারে না। শীতের এই সময়টাতে অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই জ্বর কমাতে ওষুধের বিকল্প হিসেবে পাত্রে পানি ফুটিয়ে তাতে একমুঠো লাল শাক ফেলে দিন। তারপর পানিটা ফোটাতে শুরু করুন। যখন দেখবেন ফুটতে ফুটতে পানির পরিমাণ অর্ধেক হয়ে গেছে, তখন পানি ঠাণ্ডা করে পান করুন। দুই দিন পান করার পর দেখবেন জ্বর চলে গেছে। লাল শাকে উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন-ই, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন-সি শরীরে উপস্থিত একাধিক টক্সিন উপাদানের ক্ষতি করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ক্যানসার সেল যাতে জন্ম নিতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখে। কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ে লাল শাক খেলে।
শীতে অনেকেরই খুব বেশি চুল পড়ে। যাদের এই সমস্যা তারা এক আঁটি লাল শাক ভালো করে বেটে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। তারপর তাতে ১ চামচ লবণ মিশিয়ে ভালো করে নাড়ুন। যখন দেখবেন দুটি উপাদান ঠিক মতো মিশে গেছে, তখন মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এমনটা প্রতিদিন করলে চুল পড়ার হার অনেক কমবে।
লাল শাকের মূল দিয়ে দাঁত মাজার পর নুন জল দিয়ে কুলকুচি করলে দাঁতের হলুদ ভাব কেটে যায়। সেই সঙ্গে পোকা লাগা-সহ মাড়ি এবং দাঁত সম্পর্কিত নানা রোগ ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারে না।
লাল শাকের কিছু উপকারিতা :
দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে: লাল শাকে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধির জন্য খুব উপকারী। লাল শাকে বিদ্যমান ভিটামিন এ রেটিনার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে সার্বিকভাবে দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে আপনার খাবারেরে মেনুতে রাখুন লাল শাক।
ক্যালসিয়ামের ভাল উৎস: লালশাকে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অন্য শাকের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। ক্যালসিয়াম দেহের জন্য অত্যন্ত দরকারি উপাদান বিশেষ করে দাঁত এবং হাঁড় গঠনে। তাই দাঁতের সুস্থতা, হাঁড় গঠন, গর্ভবতী এবং প্রসূতি মায়েদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে এই শাক উপকারী।
চুল পড়া কমে: চুলের স্বাস্থ্যের জন্য লাল শাক অনেক উপকারী। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলে মিনারেল ও পুষ্টি যোগায়।
রক্তশূন্যতা দূর করে: রক্তশূন্যতা রোধ করতে লাল শাক খুব উপকারী কারণ এতে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। লাল শাক শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্য এই শাকটি খাওয়া খুবই উপকারী।
হজম শক্তি বাড়ে: লালশাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা হজমে সাহায্য করে ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজমের আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে বাওয়েল মুভমেন্ট যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে।
লাল শাকের পুষ্টিগুণ:
পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, লালশাক রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং রক্তশুন্যতা দূর করে।গবেষণা বলছে, সহজলভ্য লালশাকে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’, পাইরিডক্সিন ও ভিটামিন ‘সি’। এছাড়াও রয়েছে ফোলেট, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, থায়ামিন প্রোটিন, প্যানটোথেনিক এসিড। খনিজ উপাদান ফসফরাস, আয়রন, সেলেনিয়াম, কপার, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়ামও রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে।
রক্তশূন্যতা কমায় লাল শাক
পুষ্টিবিদদের মতে, শীতকালের একটি সুপারফুড হল লালশাক। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর লালশাক বহু রোগের জন্য উপকারী। ১০০ গ্রাম লালশাকের মধ্যে ক্যালসিয়াম আছে ৩৭৪ মিলিগ্রাম। প্রোটিন আছে ৫ দশমিক ৩৪ গ্রাম। প্রতিদিন লালশাক খেলে শরীর সতেজও থাকে। তাছাড়াও এর বহু উপকারিতা রয়েছে। যেমন-
১. কোলেস্টেরলের সমস্যায় যারা চিন্তিত, তাঁদের রোজ লালশাক খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
২. লালশাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তাছাড়াও এতে অ্যান্টি ক্যান্সার গুণাবলী রয়েছে।
৩. ভিটামিন এ সমৃদ্ধ লালশাক রেটিনার কার্যক্ষমতা বাড়ায়। দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর জন্যও এটি ভীষণ উপকারী।
৪. লালশাকে প্রচুর আয়রন রয়েছে। ফলে যারা অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতার মতো সমস্যায় ভোগেন, তাদের রোজ লালশাক খাওয়া উচিত।
৫. রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে লালশাক। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা খেলে উপকার পাবেন।
৬. লালশাকে ক্যালোরির পরিমাণ অত্যন্ত কম। ফলে রোজ খেলেও ওজন বেড়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং এটি পেট ভর্তি রাখে। তাড়াতাড়ি খিদেও পায় না। এটি খেলে ওজনও কমে।
৭. লালশাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। এ কারণে এটি খেলে তাড়াতাড়ি হজম হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যার সমাধান করতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
৮. লালশাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি, ভিটামিন ই রয়েছে ।এই উপাদানগুলো শরীরের দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। ফলে কিডনি পরিষ্কার রাখে।
৯. লালশাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে । যা গর্ভাবস্থায় নারীদের জন্য খুবই উপকারী।
১০. লালশাক দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। শরীরে শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে এই শাক।
আমাদের শেষ কথা
শীতকাল মানেই শাকসবজির সমারোহ। চিকিৎসকদের ভাষায়, মৌসুমি ফল,সবজির পুষ্টিগুণ নানা ধরনের জটিল সমস্যা কমায়। প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর সুস্থ রাখতে এমনকী, ঝকঝকে, উজ্জ্বল ত্বকের জন্য শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। শীতকালের অন্যতম জনপ্রিয় সবজির একটি হল লালশাক।
আশা করছি আমাদের লাল শাকের কিছু উপকারিতা আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে।আমাদের যেকোনো আপডেট মিস না করতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। ধন্যবাদ সবাইকে সম্পূর্ণ দেখার জন্য।