জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটা ভালো জেনে নিন

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটা ভালো জেনে নিন

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটা ভালো জেনে নিন

দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে টিএফআর (টোটাল ফার্টিলিটি রেট) ছিল ৬ দশমিক ৯। অর্থাৎ ওই সময় বাংলাদেশের একজন মা গড়ে সাতটি সন্তান জন্ম দিতেন। বর্তমানে বাংলাদেশের টিএফআর ২ দশমিক ১। স্বাধীনতার সময় সক্ষম দম্পতিদের ৮ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করত, এখন সেই হার বেড়ে ৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে কন্ট্রাসেপটিভ বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির জন্য।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে প্রাথমিকভাবে দুই ভাগে ভাগ করা হয়—অস্থায়ী আর স্থায়ী পদ্ধতি। জনপ্রিয় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির প্রায় সব কটিই অস্থায়ী পদ্ধতি।

বিপুল জনসংখ্যার এ দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তৃণমূলে এখনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে রয়েছে নানা ভুল ধারণা। পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নারীরা জন্মনিয়ন্ত্রণের টেকসই ও নিরাপদ পদ্ধতি কোনটি সেটি নিয়ে দ্বিধায় থাকেন।

আরো পড়ুন- হাঁটুব্যথার কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি শুধু নারীদের ক্ষেত্রে না পুরুষদের ক্ষেত্রেও আছে। সবচেয়ে কার্যকর হলো— পুরুষদের জন্য ভেসেকটমি আর নারীদের ক্ষেত্রে টিউবাল লাইগেশন বা টিউবেকটমি।

এ পদ্ধতি কার্যকর তাদের ক্ষেত্রে করা হয়, যাদের পরিবার সম্পূর্ণ আছে অর্থাৎ তাদের আর ভবিষ্যতে সন্তানের প্রয়োজন নেই।

যারা ২ বছর বা পাঁচ বছরের মধ্যে বাচ্চা নিতে চান না, বিয়ের পর একটু সময় নিয়ে বাচ্চা নিতে চান, তাদের ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার বড়ি নিরাপদ। বিভিন্ন ধরনের মুখে খাবার বড়ি বা পিল আছে, সেটা অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শমতো গ্রহণ করতে হবে। কারণ অনেকের উচ্চরক্তচাপ থাকতে পারে, তীব্র মাথাব্যথার সমস্যা থাকতে পারে বা মাইগ্রেন, কোনো ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে, সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শমতো সেবন করতে হবে।

দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি 
আইইউডি (intrauterine contraceptive device), ইমপ্ল্যান্ট ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি রয়েছে নারীদের জন্য, যা একজন চিকিৎসক নারীর স্বাস্থ্য চেকআপ করে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি দেখভাল করে। 
স্বল্পমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে মুখে খাওয়ার পিল, ইনজেকশন ইত্যাদি।

নারীরা যেসব ক্ষেত্রে এ পিল খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন বা ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন
বয়স ৪০ বছরের বেশি, স্তন্যদানকারী নারী (সন্তানের বয়স ৬ মাস পর্যন্ত), অনির্ণীত যোনিপথের রক্তক্ষরণ, রক্তে অধিক কোলেস্টেরলের মাত্রা, রক্তনালির বা রক্ত জমাট বাঁধাজনিত রোগে আক্রান্ত, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস, ব্রেস্ট ক্যানসার, লিভারের রোগ, জন্ডিস বা ক্যানসার, আগে স্ট্রোক হয়েছে বা হার্টের রোগ আছে আর বড় কোনো অপারেশনের আগে—এসব ক্ষেত্রে নারীরা পিল খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। অথবা পিল খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। বর্তমানে বাজারে তৃতীয় বা চতুর্থ জেনারেশনের পিল পাওয়া যায়। এগুলো রক্তের কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মাসিক নিয়মিতকরণসহ নারীদের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় পিল ব্যবহার করা হয়।

ছবি: পেকজেলসডটকম

কর্মজীবী নারী
পেশাজীবী-কর্মজীবী নারীদের ক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চিন্তাভাবনা করে শুরুতেই পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ অবাঞ্চিত গর্ভপাত স্বাস্থ্যের জন্য কুফল বয়ে আনে।
যখন সন্তান নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে, চিকিৎসকের পরামর্শমতো চেকআপ করে সন্তান নিতে হবে। কারণ একটি সুস্থ সন্তান উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়।

আরো পড়ুন- ঘাড়ে ব্যথা হয় যেসব কারণে প্রতিকার

নববিবাহিত
কেউ নতুন বিয়ে করেছেন, এখনই সন্তান নিতে যাচ্ছেন না। অথবা বিয়ের কয়েক বছর পার হয়ে গেছে তবু আরও একটু দেরিতে বাচ্চা নিতে চাচ্ছেন; হয়তো জীবনটা আরেকটু সাজিয়ে কর্মক্ষেত্রে আরও কিছু সময় কাজ করে সময় নিয়ে বাচ্চা নিতে চাচ্ছেন। তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। 
 
মুখে খাওয়ার পিল 
যাদের উচ্চরক্তচাপ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার পিল স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে। 

ইমপ্ল্যান্ট দুই ধরনের 
একটা তিন বছর, একটা পাঁচ বছর মেয়াদি। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শমতো পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করতে হবে। নারীদের জন্য কাউন্সেলিং করে সব বিবেচনা এনে কোনটি তার শরীরের জন্য উপযোগী তা পর্যালোচনা করে উপদেশ দেওয়া হয়।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার নির্ভর করে স্বাচ্ছন্দ্য, দৈনন্দিন জীবন এবং শারীরিক অবস্থার ওপর।

জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি 
মিক্সড বড়ি ইস্ট্রোজেন প্রজেস্টেরন দুটি থাকে বা প্রজেস্টোরন বড়ি বা মিনি পিল। জরায়ুতে আইইউডি (intrauterine device)

আরো পড়ুন- মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি ঔষধের নাম জেনে নিন

ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতি
স্থায়ী পদ্ধতি ভ্যাসেকটমি বা লাইগেশন; সুবিধামতো যে কোনো একটি নেওয়া যায়। তবে সেটা নির্ভর করবে তার শারীরিক অবস্থার ওপর।

কর্মজীবী নারীরা একটু সময় নিয়ে বাচ্চা নিতে চান অথবা একটি বাচ্চা নেওয়ার পর ৩ থেকে ৪ বছরের সময় নিয়ে নিতে চান।

তাদের ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে জটিলতা কমানোর জন্য আবশ্যিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে, যেন অবাঞ্চিত গর্ভপাত না ঘটাতে হয়। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি শহর থেকে গ্রামে প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের  কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। 

চিকিৎসকের পরামর্শমতো নারীদের শরীরের উপযোগী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে সুস্থতা প্রয়োজন।

লেখক: আয়েশা আক্তার
সহকারি পরিচালক
২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতাল।

বিস্তারিত আরো জানুন

কেউ সদ্য বিয়ে করেছেন, একটু দেরিতে সন্তান নেবেন। কারও আবার একটি সন্তান আছে, পরের সন্তান নেওয়ার আগে কয়েক বছরের বিরতি চান। কেউ হয়তো ইতিমধ্যে দুই সন্তানের বাবা-মা, তাই জন্মনিয়ন্ত্রণে স্থায়ী কোনো পদ্ধতিতে যেতে চান। কেউ চান প্রসব-পরবর্তী সময়ের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, কেউ আবার চান গর্ভপাত-পরবর্তী সময়ে।

জন্মনিয়ন্ত্রণের নানা রকমের পদ্ধতি আছে। তবে একেক দম্পতির জন্য একেক রকম পদ্ধতি ভালো। সবার চাহিদার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ পরামর্শ বা কাউন্সেলিং, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা এবং সঠিক পরিবার পরিকল্পনাসেবার দরকার হয়। সবার জন্য একই পদ্ধতি কখনো প্রযোজ্য হতে পারে না। জেনে নিন এ বিষয়ে:

* নবদম্পতি, অর্থাৎ অল্পবয়সী দম্পতির জন্য শারীরিক পরিবর্তন, গর্ভধারণ, যৌনসংক্রমণ প্রভৃতি বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তিন বছর বা পাঁচ বছর মেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ‘ইমপ্ল্যান্ট’ উপযুক্ত পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত। এ ছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি, কনডম প্রভৃতি সহজলভ্য ও সমাদৃত।

* পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির বিশেষ চাহিদা রয়েছে; তাঁদের বেশির ভাগেরই অন্তত দুটি সন্তান রয়েছে এবং আর সন্তান নিতে চান না। অনেকে মনে করেন, আর পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কিংবা এ বয়সে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা অন্য পদ্ধতির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত হন। আসলে একজন সুস্থ মধ্যবয়সী নারীর জন্য সব পদ্ধতিই নিরাপদ। তবে বয়স্ক নারীদের, যাঁদের হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বেশি অথবা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাঁদের পিল বা বড়ি এবং ইনজেকশন ব্যবহার করা উচিত নয়। তাঁদের জন্য কপার-টি এবং স্থায়ী পদ্ধতিই বেশি উপযোগী।

আরো পড়ুন- ১০টি সাত দিনে চিকন হওয়ার উপায় জানুন ২০২৪

* কমবয়সী নারী-পুরুষের স্থায়ী পদ্ধতি, অর্থাৎ নারীর ক্ষেত্রে লাইগেশন এবং পুরুষের ভ্যাসেকটমি পদ্ধতি গ্রহণে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

* যাঁদের একটি সন্তান আছে কিন্তু পরবর্তী সন্তানের জন্মের আগে কিছুটা সময় চান (বার্থ স্পেসিং), তাঁদের জন্য তিন মাস মেয়াদি হরমোনাল ইনজেকশন, তিন বছর মেয়াদি ইমপ্ল্যান্ট, পাঁচ বছর মেয়াদি জেডেল কিংবা মুখে খাওয়ার বড়িও বেশ স্বীকৃত ও সহজলভ্য। একটি সন্তান জন্মের পর নন-হরমোনাল কপার-টিও হতে পারে জন্মনিয়ন্ত্রণের একটি ভালো ব্যবস্থা।

তাই যার যার অবস্থা বুঝে জুতসই একটি পদ্ধতি বেছে নিন। প্রয়োজনে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য সেবাদানকারীর পরামর্শ নিন।

ডা. ফাহমিদা তুলি : স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ,  ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

আমি Specific Info ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা এবং অ্যাডমিন। প্রফেশনালি কন্টেন্ট রাইটিং করার পাশাপাশি এই ব্লগে পড়ালেখা, সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক তথ্য নিয়ে লিখে থাকি।

Leave a Comment