হাঁটুব্যথার কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
হাঁটুব্যথা সব বয়সে হতে পারে। আঘাত, আর্থ্রাইটিস বা অন্য কোনো কারণে এ ব্যথা হতে পারে। চল্লিশের ঘর পেরোলে হাড়ক্ষয় বেশি হতে থাকে। বেশির ভাগ রোগী হাড়ক্ষয়ের কারণে হাঁটুব্যথা নিয়ে আসেন। এই সমস্যা পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেশি হয়। নারীদের বয়স ৪৫ বছর পার হলে, অর্থাৎ পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে এর প্রকোপ বাড়ে। তবে এমন ব্যথায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা সঠিক চিকিৎসা ও বিশেষ কিছু ব্যায়াম করলে ভালো উপকার পাবেন।
Table of Contents
- হাঁটুব্যথার কারণ ও প্রতিকার জেনে নিন
- কী কী কারণে হাঁটুব্যথা হয়ে থাকে?
- হাঁটুব্যথার চিকিৎসা
- হাঁটুব্যথায় ব্যায়াম
- প্রতিরোধ
- হাঁটু ব্যথায় ঘরোয়া প্রতিকার
- ইপসম লবণ
কী কী কারণে হাঁটুব্যথা হয়ে থাকে?
আঘাতের কারণ—লিগামেন্ট ও মেনিস্কাস, টেন্ডন ইনজুরি, এমনকি হাড় ভেঙে যেতে পারে। প্যাটেলা অবস্থানচ্যুত হয়ে ব্যথা হতে পারে।
অস্টিও আর্থ্রাইটিস বা বাত।
অস্টিও পেরোসিস বা হাড়ের ক্ষয়।
রিউম্যাটিক বাত।
জয়েন্টে ইনফেকশন।
অনেক সময় কোমরে বা পায়ের গোড়ালির নিচে ব্যথা হলেও সেই ব্যথা হাঁটুতে অনুভূত হতে পারে।
আরও পড়ুন — পেট ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
হাঁটুব্যথার চিকিৎসা
সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারিত হয়। যদি হাঁটু ফোলা থাকে, তাহলে ফোলা কমানো। যদি হাঁটুর তাপমাত্রা বেশি থাকে, তাহলে বরফ ও তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলে গরম সেক দেওয়া যেতে পারে। মাংসপেশি শক্তকরণ ও স্ট্রেচিং ব্যায়াম—যা হাঁটুর শক্তি ও রেঞ্জ অব মুভমেন্ট বৃদ্ধি করে। ক্ষয়জনিত সমস্যার প্রধান চিকিৎসা হাড়ক্ষয় বন্ধ করার চিকিৎসা দিতে হবে।
সারা জীবন রোগীকে কিছু উপদেশ মানতে হয়। যেমন ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখা, শরীরের ওজন কমানো, উঁচু কমোড বা পায়খানা ব্যবহার করা, হাঁটু গেড়ে না বসা, নিয়মিত চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যায়াম করা।
আর হাঁটু ফোলা থাকলে হাঁটাহাঁটি কম করে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
আরও পড়ুন — মাথা ব্যথা কমানোর ১০টি ঔষধের নাম জেনে নিন
হাঁটুব্যথায় ব্যায়াম
হাঁটুব্যথায় বিশেষ কিছু ব্যায়াম করলে উপকার পাওয়া যায়। এই ব্যায়ামগুলো সারা দিনে অন্তত ২-৩ বার করতে হবে, প্রতিবার ব্যায়ামটি করতে হবে ৫-১০ বার। তবে হাঁটুব্যথার ভালো ব্যায়াম সাঁতার কাটা। এতে জয়েন্টের ওপর চাপ কম পড়ে, কিন্তু মাংসপেশি শক্ত হয়।
দুই হাঁটু সোজা করে পা দুটি টান টান অবস্থায় রাখুন। এভাবে ১০ সেকেন্ড থাকুন। তারপর পা দুটি স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে বিশ্রাম নিন। ৫-১০ বার ব্যায়ামটি করুন। শুয়ে বা বসে কিংবা অফিসে কাজের ফাঁকেও এই ব্যায়াম করতে পারেন।
হাঁটুর নিচে তোয়ালে ভাঁজ করে রেখে পায়ের পাতা টান টান করে শুয়ে থাকুন ১০ সেকেন্ডের জন্য। এরপর একই অবস্থানে থেকে পায়ের পাতা স্বাভাবিক রেখে বিশ্রাম নিন। এই পদ্ধতিতে ৫-১০ বার ব্যায়াম করুন।
চেয়ারের পেছনের উঁচু অংশে দুই হাত রেখে দাঁড়ান। একবার ডান হাঁটু ও পরেরবার বাম হাঁটু ভাঁজ করুন। এভাবে ৫-১০ বার ব্যায়াম করুন।
আরও পড়ুন — ১০টি সাত দিনে চিকন হওয়ার উপায় জানুন ২০২৪
প্রতিরোধ
নিয়মিত হাঁটুন।
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেলস ও আঁশযুক্ত খাবার খান।
খেলাধুলার আগে ওয়ার্মআপ করে নিতে হবে। খেলোয়াড়দের হাঁটুর আশপাশের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে।
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে হাঁটুব্যথা নিরাময় সম্ভব।
হাঁটু ব্যথায় ঘরোয়া প্রতিকার
তাপ ও ঠাণ্ডা: ব্যথা আক্রান্ত অংশে গরম ভাপ দেওয়া এবং বরফ প্রয়োগ করা দুটোই উপকারী। তবে ব্যথার ধরনের উপর নির্ভর করবে ভাপ নেবেন না কি বরফ ঘষতে হবে।
হাঁটুতে সংক্রমণ বা প্রদাহ থাকলে গরম ভাপ দেওয়া যাবে না, কারণ তাতে সমস্যার তীব্রতা বাড়তে পারে। দীর্ঘমেয়াদি হাঁটুর ব্যথা যেমন- বাতের কারণে হওয়া ব্যথার নিরাময়ে গরম ভাপ দেওয়া অত্যন্ত কার্যকর। আর খেলাধুলা ও দুর্ঘটনা থেকে হওয়া ব্যথায় বরফ প্রয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন — ব্যায়াম করার ৯টি উপকারী দিক সম্পর্কে জেনে নিন
অ্যাপল সাইডার ভিনিগার: এতে থাকা প্রদাহনাশক উপাদান বাতের মতো দীর্ঘমেয়াদি হাঁটু ব্যথা থেকে আরাম দিতে পারে। অ্যাপল সাইডার ভিনিগার হাড়ের জোড় পিচ্ছিল করে, যা ব্যথা কমাবে এবং নড়াচড়া করতে সুবিধা হবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একগ্লাস পানিতে আধা কাপ অ্যাপল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে পান করতে হবে প্রতিদিন।
আদার নির্যাস: আদার তেল, নির্যাস কিংবা সরাসরি আদা খাওয়া হাঁটুর জন্য উপকারী। ‘জিনজেরোল’ নামক উপাদানে ভরপুর আদা, যা প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক। প্রতিদিন দুকাপ আদা চা পান করলেও উপকার মিলবে।
হলুদ: ঔষধি গুণের কারণে প্রাচীনকাল থেকেই সুপরিচিত হলুদ। এতে থাকে আরেকটি শক্তিশালী প্রদাহনাশক উপাদান ‘কারকিউমিন’, যা হাড়ের জোড়ের ব্যথা এবং প্রদাহ সারাতে অত্যন্ত কার্যকর। এক গ্লাস পানিতে আদা ও হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে ১২ থেকে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে এবং তা প্রতিদিন পান করতে হবে।
লাল মরিচ: ‘ক্যাপসাইসিন’ নামক উপাদান থাকে এই মরিচে, যা কাজ করে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে। দুই চা-চামচ জলপাইয়ের তেলের সঙ্গে এক চা-চামচ লাল মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে এবং আক্রান্ত স্থানে মালিশ করতে হবে।
আরও পড়ুন — চুলকানি দূর করার ক্রিম নাম এবং দাম কত
ইপসম লবণ: এতে থাকে ম্যাগনেসিয়াম ও সালফেট। দুটোই শক্তিশালী ব্যথানাশক উপাদান, পাশাপাশি কমায় ফোলাভাব। গোসলের পানিতে বড় এক চামচ ইপসম লবণ মিশিয়ে তাতে আধা ঘণ্টা ডুবে থাকতে পারেন।
ঘরোয়া এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণের পাশাপাশি ঘরেই টুকটাক শরীরচর্চা করাও উপকারী হবে। ব্যথা দীর্ঘদিন ভোগালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।