পাল শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ দিক কী কী

পাল শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ দিক কী কী

পাল শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ দিক কী কী

  • অথবা, পাল শাসনের উদ্বোখযোগ্য দিকের বর্ণনা দাও। 
  • অথবা, পাল শাসনের উল্লেখযোগ্য দিক কী ছিল? 

উত্তর : ভূমিকা : বাংলার ইতিহাসে পালবংশের অভ্যুদয় এবং পাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। পাল রাজাগণ সুদীর্ঘ চারশত বছর রাজত্ব করেছেন। 

পাল রাজত্বের এ সময়সীমা বাঙ্গালির ইতিহাসে এক স্মরণীয় যুগ। এ সুদীর্ঘ শাসনামলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ দিক লক্ষণীয়। 

এ সময় শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয় বরং সমাজ, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও এক চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল। 

আরও পড়ুনঃ

গোপাল পাল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হলেও সাম্রাজ্যের উত্থান ও প্রতিপত্তি বিস্তারে ধর্মপালের ভূমিকা অপরিসীম ।

→ পাল শাসনের গুরুত্বপূর্ণ দিক : নিম্নে পাল শাসনের গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. প্রজাবৎসল শাসন নীতি : বাংলায় দীর্ঘ পাল শাসনের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিক তাদের প্রজাবৎসল শাসন নীতি। 

পাল সম্রাটগণ ধর্মীয় সম্প্রীতির নীতি গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে ধর্মপালের প্রধান মন্ত্রী ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ এবং এ মন্ত্রিপরিবার তিন পুরুষ ধরে পাল রাজাদের শাসনের সাথে জড়িত ছিল।

২. রাষ্ট্রীয় চেতনার উন্মেষ : চার শতাব্দীকাল ব্যাপী পালবংশের শাসন বাংলার জীবনে নব যুগের সৃষ্টি হয়েছিল। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, “এই সাম্রাজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালির নতুন জাতীয় জীবনের সূত্রপাত হয়।” 

পালশক্তিই সর্বপ্রথম বাংলায় রাজনৈতিক ঐক্য ও চেনার উন্মেষ ঘটায় এবং বাংলাকে এক সর্বভারতীয় শক্তিতে পরিণত করে।

৩. সার্বভৌম রাজশক্তি প্রতিষ্ঠা : বাংলায় পালশক্তির মধ্য দিয়ে সার্বভৌম রাজশক্তির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। যার ফলে পালবংশের মর্যাদা ও খ্যাতি বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।

৪. শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রভূত উন্নয়ন : পাল রাজারা রাজ্যশাসনের পাশাপাশি শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও প্রভূত সাফল্য দেখায়। ড. নীহার রঞ্জনের মতে, পাল শাসনে দক্ষিণ-পূর্ব ভারত একটি স্বতন্ত্র ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যে আবদ্ধ হয়।

৫. ভাস্কর্য শিল্পের প্রসার : পাল যুগের শিল্পকলার মধ্যে ভাস্কর্য শিল্পের প্রভূত অগ্রগতি ঘটেছিল। পাল যুগের অসংখ্য প্রস্তর মূর্তি বাংলার বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া গিয়েছে। এ যুগে ভাস্কর্যের শিল্প সাধনায় প্রস্তর খন্ড যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিল ।

৬. সামাজিক ঐক্য : পাল রাজারা তাদের রাজত্বে সামাজিক ঐক্যকে গুরুত্ব দিত। তারা নিজ ধর্মের চর্চা ও অন্যদের ধর্মকেও গুরুত্বসহকারে মূল্যায়ন করতো। যার ফলেই পাল রাজত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল।

পাল সাম্রাজ্যের উৎসস্থল ছিল বাংলা অঞ্চল। পাল সম্রাটদের নামের শেষে ‘পাল’ অনুসর্গটি যুক্ত ছিল যার অর্থ “রক্ষাকর্তা”। পাল সম্রাটেরা বৌদ্ধধর্মের মহাযান ও তান্ত্রিক সম্প্রদায়ের অনুগামী ছিলেন। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন বাংলায় তেমন কোন যোগ্য শাসক ছিল না ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে গৌড়ের সম্রাটপদে গোপালের নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে এই সাম্রাজ্যের পত্তন ঘটে। অধুনা বাংলা ও বিহার ভূখণ্ড ছিল পাল সাম্রাজ্যের প্রধান কেন্দ্র। এই সাম্রাজ্যের প্রধান শহরগুলি ছিল পাটলীপুত্র, বিক্রমপুর, রামাবতী (নরেন্দ্র), মুঙ্গের, তাম্রলিপ্ত ও জগদ্দল। বাংলার প্রথম বংশানুক্রমিক শাসন শুরু হয় পাল রাজত্বকালে। সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ৪০০ বছর শাসন করেন পাল বংশের রাজারা।

জেনে নিই/পাল শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ দিক কী কী

  • বাংলার প্রথম বংশানুক্রমিক শাসন শুরু হয় পাল বংশের মাধ্যমে।
  • বাংলার দীর্ঘস্থায়ী (৪০০ বছর) রাজ্য শাসন করে পাল রাজবংশ।
  • পাল বংশের রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
  • মোট ১৭ জন পাল শাসক বাংলা শাসন কার্য পরিচালনা করেন।
  • পাল রাজাদের পিতৃভূমি ছিল- বরেন্দ্র অঞ্চল।
  • বাংলায় চিত্রশিল্প ও পালি ভাষার বিস্তার ঘটে পাল আমলে।
  • এ সময়ে বাংলা সাহিত্যের একমাত্র প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদ রচিত হয়।
  • চর্যাপদ নেপালের রাজদরবার থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কার করেন- ১৯০৭ সালে।
  • পাল যুগে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রথম আবির্ভাব হয়।

পাল শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ দিক কী কী

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, পাল শাসনের দীর্ঘ চার শতাব্দীকাল বাংলার জন্য বয়ে এনেছিল অনেক কৃতিত্ব। এ কৃতিত্বের গৌরব যেমন একদিকে শাসকগোষ্ঠীর তেমন অন্যদিকে জনগণের। 

পাল শাসন তাই প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার । এ শাসনামলে সৃষ্ট প্রত্যেকটি সংস্কারই ছিল মহামূল্যবান ।

আমি Specific Info ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা এবং অ্যাডমিন। প্রফেশনালি কন্টেন্ট রাইটিং করার পাশাপাশি এই ব্লগে পড়ালেখা, সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক তথ্য নিয়ে লিখে থাকি।

Leave a Comment